শিরোনাম

[getTicker results="10" label="random" type="ticker"]

রাজশাহী সফরনামা-১ শিক্ষানগরীতে স্বাগতম! মারুফ তকী


তামাদ্দুন২৪ডটকম:
১।
রাজশাহী, নামটা ছোটকাল থেকে বইয়ের পাতা হতে বন্ধুদের মুখ থেকে শোনা হয়েছে। এখানের ঐতিহ্যবাহী কিছু জিনিসের উপর প্রথম থেকেই লোভ লেগে আছে, যার মাঝে আম-ই বেশী ইচ্ছে জাগিয়েছে।
দুলাভাই যখন ফোন করে রাজশাহী যাবো কিনা জিজ্ঞাসা করলো তখন কোন কিছু চিন্তা না করেই বলে দিলাম, যাবো। রাতের বাসে রওনা দিলাম। কিছুক্ষণ ঘুম আর কিছুক্ষণ মোবাইল টিপে সময় পার করে দিলাম। মাঝপথে সিরাজগঞ্জ হোটেলে নেমেছে, বিশমিনিটের বিরতীতে কেবল বগুরার বিখ্যাত দইটাই খেয়ে ছিলাম।

২।
সকাল ভোর। পাখির কিচিরমিচির আওয়াজ আর আমগাছের মাতাল করা বাতাসের মাঝে গাড়ি নামিয়ে দিল রাজশাহী শহরের আগে বানিশ্বর নামক এলাকায়। নামাজ পড়ে চলে গেলাম তালতো বোনের বাসায়, এটাই আমাদের আসার কারণ। উনার স্বামী পুলিশ একাডেমি মসজিদের ইমাম খতিব। আজ এখানে অনুষ্ঠান তাই দাওয়াত দিয়েছে৷
নাশতা করে ঘন্টাখানেক ঘুমিয়ে নেয়ার পর তালতো ভাই হৃদয় এল। তার মাদ্রাসা দেখতে যাবে, আমাকেও সাথে নিল। অটোতে ঢুলেঢুলে ঘুমিয়ে পড়ছিলাম কিন্তু শিক্ষানগরীর রোডঘাটের উন্নত অবস্থা এবং যুবক-যুবতীদের শিক্ষাকেন্দ্রিক ব্যস্ততা আমাকে উঠিয়ে দেয়, দেখতে থাকি নতুন এক সমাজকে, বুঝতে চেষ্টা করি তারা কিভাবে সফল হয়েছে এবং হয়ে চলছে।

ভিতরের শহরের অবস্থা তেমন একটা ভাল না দেখালেও রাজশাহী নগরীর পরিবেশ মনোমুগ্ধকর। সুন্দর, পরিস্কার একটা নগরী। এর পিছনের কারণ হতে পারে উঁচুউঁচু দালানকোঠা না থাকা হয়তো, কারণ ছোট দেয়ালে আকাশ কখনো বাধা পায় না। কিন্তু বড় বড় দেয়ালে আটকে যায় আকাশের আলো, তাই ঢাকা শহরের মত এলাকাগুলোকে দেখা যায় প্রাণশূণ্য, ইটপাথরের নিথর দেহের মত৷
এই এলাকার হোটেলগুলোতেও পাওয়া যায় ঐতিহ্যের ছোঁয়া। আধুনিকতার পরশ না নিয়ে তারা এখনো পরে আছে নিজেদের খাবারেই। পুরি বা মোগলাই দিয়ে মিষ্টি খাওয়া আমাদের জন্য হাইস্যকর হলেও তাদের কাছে এটাই খাদ্য। শহরে বা গ্রামে, যেখানেই যাবেন সেখানেই তাদের এসব নিজস্ব খাবারের দোকানই বেশি দেখতে পাবেন। আমাদের মানসিকতার হোটেল নেই বললেই চলে।

৩।
এখানের প্রায় ছেলেমেয়েদের স্কুল ড্রেস পরা বা বই হাতে নিয়ে কোথাও যাচ্ছে, এমনটাই দেখেছি। তাছাড়া এই এলাকার মা-বাবারাও যে পড়াশোনার ব্যাপারে সোচ্চার সেটা অটোতে একজন মাকে দেখে বুঝেছি৷ উনার ছেলের প্রাইভেট পড়ানোর টিচার বাসায় গিয়ে পায়নি দেখে প্রায় দশজায়গায় কল দিয়ে ছেলের খোঁজ নিয়েছে৷ উনার অস্থিরতা দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম, ছেলের শিক্ষার প্রতি এত সচেতনতা দেখে এই এলাকার শিক্ষায় উন্নতির মূল কারণটা বের করে নিলাম।
কে যেন বলেছিল, তুমি আমাকে একটি শিক্ষিত মা দেও আমি একটি শিক্ষিত সমাজ উপহার দিবো। জানিনা এই মা শিক্ষিতা কিনা, তবে তিনি যে আদর্শ ও শিক্ষাসচেতন মা তা ঠাওর করতে পেরেছি। বিশ্বাস করি, এমন মা প্রতিটায় জেলায় জেলায় হলে এই দেশ ও সমাজ একসময় বিশ্বে মাথা উঁচিয়ে শাসন করবে৷
তাছাড়া শিক্ষানগরী হওয়ার পিছনে আরেকটা কারণ বের করতে পেরেছি, এখানের ছেলেদেরকে রাস্তার ধারে বসে আড্ডা মারতে, অতিরিক্ত মোবাইল চালাতে দেখিনি। অথচ এসব চিত্র আমরা আমাদের এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত দেখি। এমনকি সমাজের অবস্থা দেখে 'মোবাইল ছাড়া তরুণ জীবন' হয়, কথাটা অবিশ্বাস্য মনে করি৷
যাইহোক, সবমিলিয়ে জ্ঞানের ভুবনে, শিক্ষাশহরে বেশ ভাল লেগেছে৷ এই এলাকার অবস্থা দেখে আগামী প্রজন্মের প্রতি ক্ষিণ আশা বা ভরসা জন্মেছে। তাদের জন্য দোয়া করি, এমন অবস্থা যেন পুরো দেশে শুরু হয় এটাই কামনা করি।

২-৪-২০১৯ ঈসায়ী।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ