আন্তর্জাতিক সংবাদমধ্যম আলজাজিরা ইংরেজি ভাষ্যমতে এ পর্যন্ত জয় করা ১৮ প্রদেশের নামগুলো হলো: কান্দাহার, গজনী, হেলমান, নিমরুজ, ফারাহ, জুযজান, কুন্দুজ, বাদাখশান, তাখার, বালগান, সামনিগান, সারপুল, বাদগিস, গাওর, হেরাত, লস্করগাহ, সেবেরগান, বলখ।
একসময়ের ইসলামী সোনালী শাসনে আফগানিস্তান রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসা দেশটির মুক্তিকামী সংগঠন তালেবান এখন রাজধানী কাবুল দখলের জন্য তীব্র গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বলে উর্দু নিউজ সূত্রে জানা গেছে।
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের ৫০ কিলোমিটার সীমার মধ্যে পৌঁছে গেছে তালেবান বাহিনী। শুক্রবার লগার প্রদেশের রাজধানী পুল-ই আলম দখলের মধ্য দিয়ে তারা এই মাইলফলক অর্জন করেছে।
এই প্রদেশ থেকে আফগান পার্লামেন্টে নির্বাচিত নেতা সাঈদ কারিবুল্লাহ বলেছেন, প্রাণভয়ে মানুষ পুল-ই আলম ছেড়ে পালাচ্ছে।
আল জাজিরার খবরে বলা হয়েছে, লগার প্রদেশ দখল করতে গিয়ে তালেবান প্রথমে সব সরকারি ভবন দখল করে নেয়। এরপর তারা প্রদেশটির গভর্নর এবং গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে বন্দি করেন।
স্থানীয় কাউন্সিলর হাসিবুল্লাহ স্তানাকজি এবং সংসদের প্রাদেশিক প্রতিনিধি আহমাদি বলেন, লগার প্রদেশের গভর্নর কাউয়ুম রাহিমি তালেবানের বিরুদ্ধে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টা যুদ্ধ করেন। কিন্তু সরকারের কাছ থেকে বিমানসহ অন্যান্য সহযোগিতা চেয়েও পাননি তিনি। একপর্যায়ে তালেবান সদস্যরা তাকে ঘিরে ফেলে এবং পরবর্তীতে বন্দি করেন।
আগামী ৩০ দিনের মধ্যে কাবুলকে বিচ্ছিন্ন এবং ৯০ দিনের মধ্যে দখলে নেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছে তালেবান। বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা তাদের গোয়েন্দাদের তথ্যের বরাত দিয়ে রয়টার্সকে তথ্য জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মার্কিন ওই কর্মকর্তা বলেছেন, কাবুলের পতন নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দারা নতুন মূল্যায়ন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্র-নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সামরিক জঙ্গি-সন্ত্রাসী বাহিনী আফগানিস্তান থেকে চলে যাওয়ায় দেশজুড়ে তালেবানের দ্রুত অগ্রগতির ফলে কাবুলের ব্যাপারে ওই ভবিষ্যদ্বাণী গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে।
তিনি বলেছেন, ‘এটি কোনও আগাম অনুমান নয়। তবে আমাদের সমর্থিত আফগান সরকার বাহিনী আরও প্রতিরোধ গড়ে তুলে গতি পরিবর্তন করতে পারে।’
বুধবার দেশটির উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ বাদাখশানের রাজধানী ফাইজাবাদের পতন হয়েছে তালেবানের হাতে; যা আফগান সরকারের জন্য সর্বশেষ ধাক্কা। তালেবানের হামলার গতি প্রতিরোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটির আমেরিকার মদদপুষ্ট রাজাকার বাহিনী।
তালেবান একেবারে কাছাকাছি চলে আসায় একই দিন রাজাকার বাহিনীর প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশটির উত্তরাঞ্চলের সবচেয়ে বড় শহর মাজার-ই-শরিফ রক্ষার জন্যনিজেদের সমর্থিত পুরনো রাজাকার সৈন্যদের এক সমাবেশে যোগ দিতে সেখানে উড়ে যান।
বাদাখশানের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য জাওয়াদ মুজাদিদি বলেছেন, মঙ্গলবার হামলা চালানোর আগে তালেবানরা ফাইজাবাদ অবরোধ করেছিল।
তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আফগান জাতীয় নিরাপত্তা বাহিনী (এএনডিএসএফ) কয়েক ঘণ্টার প্রচণ্ড লড়াইয়ের পর পিছু হটেছে। ফাইজাবাদের পতনের সঙ্গে সঙ্গে দেশের পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল তালেবানের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত আফগানিস্তানের রাজাকার বাহিনীকে হারিয়ে দেশের শাসন ক্ষমতা পুনর্দখল এবং ইসলামি সোনালী আইন জারির মাধমে দেশটির উন্নতি ও অগ্রগতি সাধনের লক্ষ্যে লড়াই করে চলছে তালেবান।
তামাদ্দুন/হাসান আল মাহমুদ
0 মন্তব্যসমূহ